পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
নিউজবাংলা২৪ডটনেট:: পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লৌহজংয়ের মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সরানো হচ্ছে লঞ্চ এবং সিবোট ঘাটও। আগামী মে মাসের মধ্যে ঘাটগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। প্রায় ৫২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ঘাট এলাকায় ঘাটের পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ড এবং সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হবে। ঘাটগুলো সরিয়ে নিলে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ সহজ হয়ে গেলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া ঘাট থেকে পূর্বদিকে প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দূরত্বে একই উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের চন্দ্রবাড়ি অথবা পশ্চিম দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বে মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া এলাকায় ঘাটগুলো স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ঘাট সরিয়ে কান্দিপাড়া এলাকায় নেয়ার সম্ভবনা বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফউদ্দিন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণের দরপত্র ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির নদী শাসন কাজের দরপত্র আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করা হবে। সে হিসেবে আগামী জুন মাসে মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে, কারণ এ সময়ের মধ্যে ঘাট অন্যত্র সরিয়ে না নিলে মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে দেরি হতে পারে। সেতু বিভাগ চিঠি দিয়ে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছে।
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র অনযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য হঠাৎই কান্দিপাড়া বা চন্দ্রবাড়ি এলাকায় মাওয়া ফেরিঘাটসহ অন্যান্য ঘাট সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে পরিকল্পনা ঠিক করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই দুটি এলাকার মাটি পরীক্ষা ও জরিপের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন জায়গায় ঘাট স্থাপন করা হবে।
সূত্রটি আরো জানায়, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষ নৌ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ভূমিতে বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি, লঞ্চ ও সিবোট ঘাট এবং অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে সরানোর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর নৌমন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মাওয়া ঘাট সরিয়ে কান্দিপাড়া এলাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঘাট সরিয়ে নেয়ার জন্য পদ্মা নদীর তীরে প্রায় আটশ’ মিটার জায়গা ভরাট করে নতুন অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
সূত্র মতে, আইডব্লিউএম ও সিইজিআইএস’র মাধ্যমে জরিপ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ এবং সেতু বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে। পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকেই এর অর্থায়ন হচ্ছে, কারণ এটি পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক কাজ। অর্থায়নের বিষয়টি ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য এরই মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের ২৬ জুন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল কাঠামোর চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করেছে। পরবর্তীতে গত ৭ জুলাই থেকে দরপত্র বিক্রি করা শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। প্রকল্পটির মূল সেতু অংশের জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় নয় হাজার ১৭২ কোটি টাকা।
নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কাওড়াকান্দি-মাওয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ অঞ্চলের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যও এই বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হলে বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য আনুমানিক প্রায় ৫২১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪২ কোটি, ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৯ কোটি ৯০ লাখ, নতুন ফেরি রুট নির্মাণ বাবদ ৭২ কোটি, বন্দর সুবিধাদি নির্মাণ বাবদ ১৬ কোটি ৪৩ লাখ, নদীতীর রক্ষাকরণ বাবদ ৩১৭ কোটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ বাবদ ৪৮ কোটি টাকা এবং বিবিধ পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অন্তর্ভুক্ত আছে।
বর্তমান ফেরিঘাট থেকে কান্দিপাড়া এলাকা দুই হাজার ফুট উজানে অবস্থিত। ঘাট স্থানান্তরের জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় মোট জমির পরিমাণ ২৩ দশমিক ৭১ একর। কান্দিরপাড়া এলাকায় প্রাউ সাতশ’ বসতবাড়ি এবং প্রায় ১০-১২ হাজার ছোটবড় গাছপালা রয়েছে। এসব বসতবাড়ির মধ্যে বেশ কিছু সরিয়ে নেয়া হবে এবং অল্প কিছু গাছ কেটে ফেলে অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘাটগুলো সরিয়ে নিলে পদ্মাসেতু নির্মাণ সহজতর হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। নতুন অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যাবে, কারণ ওই এলাকায় জমির ওপর নতুন করে একটিই অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে যেখানে মানুষের বসতি নেই।
প্রসঙ্গত, ২৯০ কোটি ডলারে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ছিল। এছাড়া এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে। কিন্তু প্রকল্পটিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে প্রথমে বিশ্বব্যাংক এবং পর্যায়ক্রমে অন্য দাতা সংস্থাগুলো ঋণ চুক্তি বাতিল করে। তবে সরকার চাইলে জাইকা আবার পদ্মা প্রকল্পে ফিরবে বলে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আরো দু’একটি দাতা সংস্থাগুলো আবার এই প্রকল্পে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে বলে।