নিউজবাংলা২৪ডটনেট:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি তাকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের অনুমতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী নতুন কয়েকজন মন্ত্রী নিয়ে ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠন করার কথাও বলেছেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে এবং কেউ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। তিনি আরো উল্লেখ করেন, নির্বাচনের আগে সংসদের অধিবেশন আর বসছে না। বিরোধী জোটের নেতারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে দেখা করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে তার হস্তক্ষেপ চাওয়ার এক দিন পরেই বুধবার নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্ধারিত বক্তৃতায় একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য আমরা সকল দলকে আমন্ত্রণ জানাই। আমি বিরোধী দলকে অনুরোধ করেছিলাম এবং বলেছিলাম নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নির্বাচনকালীন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে, সেখানে আপনারা কতটা মন্ত্রিত্ব চান কোন কোন মন্ত্রণালয় চান, আমাদের বলুন আমরা দেবো। আসুন, সকলে মিলে সরকার গঠন করে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করি। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ঠ শক্তিশালী। কমিশন চাইলে এখন নিজেরাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করতে পারে। নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই, তার প্রমাণ আমরা দিয়েছি। কিন্তু বিরোধী দল আমাদের সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। আমি জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানায়, কারণ আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তারা সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধী দল আবারো অসংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায়। দেশে আরেকটি এক-এগারোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক আসলে কি নির্বাচন হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।” শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে কোনো না কোনো ঝামেলা হয়েছে। সংগ্রাম, আন্দোলন, রক্তপাত হয়েছে। আর এই সুযোগে দেশে বার বার অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় এসেছে। আমরা এই বিষয়টির অবসান চাই। অগণতান্ত্রিক কোনো শক্তি যাতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা এমন একটি ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই, যাতে পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে না হয়, কোন রক্তপাত না হয়। বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতীতে নির্বাচন করার একটি ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। ভোটের অধিকারের জন্য আমরা সারা জীবন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্য বিরোধী দলের কোন সহযোগিতা পায়নি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নবম জাতীয় সংসদে ৪২৮টি কার্যদিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্বাধিক কার্যদিবস। সর্বাধিক আইন এ সংসদের পাস করেছি। দুটি বেসরকারি বিলসহ ২৭১টি আইন এ সংসদে পাস হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের ৮ম সংসদের তুলনা করে তিনি বলেন, “৮ম সংসদে ৩৭৩ টি কার্যদিবস ছিলো ও শতাধিক বিল পাস হয়েছে।”
প্রধামন্ত্রী বলেন, “মহমান্য হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মার্শাল ল’ জারি করে ক্ষমতা দখল নেয়া এবং আইন প্রণয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। ৩৮ বছর ক্ষমতার পরিবর্তন সাংবিধানিক হয়নি। প্রতিবারই কোনো না কোন আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। ৩৮ বছরে মাত্র একবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে ২০০১ এ। এছাড়া আর কখনও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। যেটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।”
তিনি বলেন, “আগামীতে যাতে কেউ কোনভাবে কোনো ফাঁক-ফোকরে অসাংবিধানিক ভাবে যাতে কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে, সে জন্যই আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি।”