bdr_kilনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা পিন্টু এবং আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে ফাঁসির আদশে দিয়েছে আদালত।এছাড়া সর্বনিম্ন তিন থেকে দশ বছরের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে ২৫১ জনকে কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এই হত্যা মামলার রায় দেয়া শুরু করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘিরে লালবাগ এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গত ৩০ অক্টোবর এ রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামিদের রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আনা হয়। গত ২০ অক্টোবর এই মামলার সর্বশেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৩০ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। রায় লেখা সম্পন্ন না হওয়ায় পূর্বনির্ধারিত ওই তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়।

বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনার ৪ বছর ৮ মাস পর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে বিচার প্রক্রিয়া শেষে এত সংখ্যক আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা বিচারিক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিচারের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, ইতিহাসের বৃহত্তম ফৌজদারি মামলাটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসভুক্তও হতে পারে। নৃশংস এ ঘটনায় স্বজনহারা একেকটি পরিবারের সদস্যরাও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য এ দিনটির প্রতীক্ষায় রয়েছেন। পিলখানা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন পিন্টু ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ আসামির সংখ্যা ৮৫০। তাদের মধ্যে ২০ জন পলাতক। চার জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। জামিনে আছেন ১৩ জন। আসামিদের মধ্যে ৬ জন ডিএডি আছেন। ৮২৩ আসামির উপস্থিতিতে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। পিলখানা হত্যা মামলার ২৩৩তম কার্যদিবসে ৬৫৪ জন সাক্ষী আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এতে সব আসামির অপরাধ উঠে আসে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। মামলায় সাক্ষীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। হত্যা মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৮৫ জন। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ২২ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়ই ন্যায় বিচারের আশা করছেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এসব মামলায় সারাদেশে ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ১১৫ জন। বিডিআর আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা ছিল সাত বছর কারাদণ্ড। বর্তমানে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। বিডিআর আইনে পাঁ?চ ডিএডিকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। হত্যা মামলার আসামিদের তৌহিদসহ ৬ জন ডিএডি রয়েছেন। এক ডিএডিসহ ৪ আসামি মারা গেছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে সুবেদার ৪৪ জন, হাবিলদার ৮০ জন, নায়েক ৬০ জন, ল্যান্স নায়েক ৬৮ জন, সিপাহী ৫০৪ জন, পাচক ১৪ জন, ওবিএম ১ জন। পিয়ন ১ জন, রাখাল ২ জন, সুইপার ১৮ জন, ওয়ার্ডবয় ১ জন, কার্পেন্টার ২ জন, সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন পিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ২৩ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। হত্যা মামলায় সিআইডি দুই হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার এক বছর সাড়ে চার মাস পর এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। মূল চার্জশিট ছিল ১৩২ পৃষ্ঠার। মামলার কেস ডকেটসহ তদন্ত প্রতিবেদনের ওজন ছিল প্রায় আধা মণ।

মামলায় সাক্ষী করা হয় মন্ত্রী, এমপি, তিন বাহিনীর প্রধান, সাংবাদিকসহ ১ হাজার ২৮৫ জনকে। যার মধ্যে ঘটনার শিকার পরিবারের ৬৮, বিডিআর সদস্য ১৮২, সাংবাদিক ১৫, সাধারণ নাগরিক ১১০, অস্ত্র ও মোবাইল ফোনসেট বিশেষজ্ঞ ৫, পুলিশ সদস্য ২০২, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০, রেডক্রিসেন্টের সদস্য ৩, র‌্যাবের সদস্য ৫৭, মাল জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী ২৩০, টিআই প্যারেডের ম্যাজিস্ট্রেট ১, ১৬৪ ধারায় অভিযুক্তদের জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেট ৩২, লাশ শনাক্তকারী ও সুরতহাল প্রস্তুতকারী ১০২, চিকিৎসক ৩৭, স্কেচ ম্যাপ তৈরিকারী ৩ জন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইজিপি, সাবেক সেনাপ্রধানসহ অন্যান্য সাক্ষী ১৪ জন, বাদী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোগ্রাফার ৩৬ এবং সেনা কর্মকর্তা ১০৬ জন।

এদের অনেকেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ মামলার সাক্ষী থাকলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫৬৯ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। যা ২ হাজার ৫৩ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় একটি বিচার। বিশ্বের ইতিহাসে একই দিনে একই স্থানে একই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তার নৃশংস হত্যার ঘটনাও নজিরবিহীন। এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে লিপিবদ্ধ হওয়ার মতো একটি মামলা।’ আদালতের এজলাসে বসে এভাবেই বিডিআর হত্যা মামলাকে বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন উল্লেখ করে মামলাটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জহুরুল হক। পরে মামলাটি তৃতীয় মহানগর দায়রা জজের আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *