Jamat-e-islam-bangladeshcec_bdনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এখন তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ সময় তিনি আরও জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়ে ‘দ্রুত’ পদক্ষেপ নেয়া হবে। শনিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, “আদালতের আদেশ সবাইকে মানতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু নেই। এখন রায় বাস্তবায়ন করতে হবে।”

হাইকোর্টে রায় বহাল থাকলে জামায়াত আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানো হবে বলে দলটির নেতারা বলে আসছেন। গত ১ অগাস্ট উন্মুক্ত আদালতে হাই কোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, “জামায়াত এবং নির্বাচন কমিশন যুক্তি দেখিয়েছে, নিবন্ধনটি সাময়িক ছিল। কিন্তু সাময়িক নিবন্ধন দেয়া যায় বলে আমরা কোনো বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে পাইনি। নিবন্ধন সনদেও সাময়িক নিবন্ধন বলে কোনো বিষয় আমরা পাইনি। ওই সময় ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী, শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই বিগত নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করে। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, “সংশ্লিষ্ট বিধিতে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এটা বলেছে, শর্ত পূরণ না করে দেয়া গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে এ ধরনের কোনো নিবন্ধন দেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। অথবা নির্বাচন কমিশন ওই গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে শর্ত পূরণে জামায়াতকে অনুরোধ করতে পারে না। কারণ ওই নিবন্ধন প্রথম আইনি কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে।” এর মাধ্যমে আমরা এটা বলতে পারি, এ বিষয়ে জারি করা রুলের সারবত্তা রয়েছে। রুলকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং ফলহীন ঘোষণা করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর সূচনা হয় উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট, তখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলেও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত।

১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় জামায়াতও এর আওতায় পড়ে। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন জামায়াতকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। তারা সারা দেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রায়েও দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে দলটির সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযমসহ শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবারই সাজা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *