salauddin_kader_bnp_faseনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: ৯টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকার ফাঁসির আদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (সাকা চৌধুরী) ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করা হয়। প্রথমেই বিচারপতি আনোয়ারুল হক ১৭২ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন।সাকার বিরুদ্ধে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ১, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ৪টা অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।

প্রমাণিত কয়েকটি অভিযোগ: রাউজনের গহিরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে হিন্দু পাড়ায় ব্রাশফায়ারে হত্যার ২ নম্বর। প্রামাণিত হয়নি সাকার সহযোগীর মাধ্যমে ৫ জনকে গুডস হিলের নির্যাতনকেন্দ্রে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রথম অভিযোগ। কুণ্ডশ্বরী ঔষধালয়ের কর্ণধার অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে সাকার নির্দেশনায় প্রার্থনারত অবস্থায় ব্রাশফায়ার হত্যার ৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত। হিন্দুঅধ্যাষিত জগৎমল্লাপাড়ায় গণহত্যার ৪ নম্বর, রাউজানের সুলতানপুরে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগে করা ৫ ও রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৭০ জনকে হত্যার ৬ নম্বর অভিযোগ ছাড়াও ৭, ৮, ১৭ ও ১৮ প্রমাণিত হয়েছে।

সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দুটি প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্টদের তল্লাশি করে ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। সকালে সাকা চৌধুরীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালের আনা হয়। বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে এটাই হবে এ ধরনের মামলায় প্রথম রায়। এর আগে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে জামাতের ৬ নেতার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

এটি ট্রাইব্যুনালের অন্যতম আলোচিত মামলা। বিচার চলাকালে নানা মন্তব্য ও বক্তব্য দিয়ে সব সময় আলোচনায় ছিলেন সাকা চৌধুরী। বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, আসামির কাঠগড়ায় বসে বিচারকাজ, সাফাই সাক্ষী ও চলমান রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করা, আইনজীবীকে বাদ দিয়ে নিজেই মামলা পরিচালনা করা—বিচার চলাকালে এজলাসে এমন বহু ঘটনার জন্ম দেন তিনি। তাই রায়ের পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত দিনে তিনি কী করতে পারেন তা দেখার বিষয়।  সোমবার এ রায়ের দিন ঠিক করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকায় এ মামলা ৪ নম্বরে রয়েছে। গত ১৪ আগস্ট এ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। ওই দিন রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখে ট্রাইব্যুনাল জানায়, যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে।

ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগই সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছেন তারা। এদিকে, খোদ ট্রাইব্যুনালকে অবৈধ মন্তব্য করেও সাকা চৌধুরীর বেকসুর খালাস দাবি করেন তার আইনজীবী। একাত্তরে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে ও বর্তমানে বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, চট্টগ্রামে তার ইন্ধনেই মুক্তিকামী বাঙালি হত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।  হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ ৭২টি ঘটনায় ২৩টি অভিযোগে বিচার চলে তার। বলা হয়েছে, অর্ধশত মানুষকে হত্যা, গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়ে ৩ শতাধিক মানুষকে মেরে ফেলা, পাঁচজন নারীকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দেয়া, শতাধিক মানুষকে অপহরণ করে তার গুডস হিলের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন চালানো আর ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন শতাধিক মানুষকে।

এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী। বিপরীতে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪ জন। চারদিন রাষ্ট্রপক্ষ আর ৬ দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।

সাকার বিচার শুরু: ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ১৭ নভেম্বর তা আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। ওই বছরের ১৪ মে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ২৪ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন ৪১ জন, আসামিপক্ষে চারজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *