rampal_power_plantনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: আজ শনিবার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুষ্টিয়া সফরকালেই তিনি এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ অক্টোবর এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। কিন্তু সেই সময়ের ১৭ দিন আগেই এটির উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। তবে কেন সময় এতটা এগিয়ে আনা হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
ধারনা করা হচ্ছে, শনিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেহেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেবেন, তাই একই অনুষ্ঠানে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করা হবে। রামপালের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১১টায় ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদুৎ উপকেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সাথে ভিডিও সম্মেলনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। রিমোট টিপে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বাগেরহাট রামপালে মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন হয়ে যাবে। তবে প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়া থেকেই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনের বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
তবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রায় পাঁচদিনব্যাপী রামপাল অভিমুখে লং মার্চও করেছে। এই প্রকল্পের ওপর স্থিতাবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের হয়েছে।  বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদর বেঞ্চে এই রিটের শুনানিও হবার কথা ছিল। কিন্তু বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি এই রিটে বিব্রত বোধ করলে নিয়ম অনুযায়ী এটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে সুন্দরবেনর কাছে মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের বিরোধিতা শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এসেছে। সুন্দরবনের মতো একটি অত্যন্ত স্পর্শ্বকাতর বিশ্ব ঐতিহ্যের পাশে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও বিবৃতি দিয়েছেন।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র  নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে রং সিগন্যাল দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের হাত থেকে বাচতে বাংলাদেশ যখন শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে, ঠিক তখন বাংলাদেশ নিজেই পরিবেশের জন্য, বিশেষ করে সুন্দরবন ধ্বংসের মতো একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।’
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টিও এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকার তার সিদ্ধান্তে অনঢ়।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র  মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে এ জাতীয় প্রকল্প নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় না। অথচ রামপালে যে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যাগ নেয়া হয়েছে, সেটি সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে, যা সরকার নির্ধারিত সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার ‘এনভায়রনমেন্টালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ অর্থাৎ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত স্পর্শ্বকাতর ও জটিল বলে চিহ্নিত এলাকার  থেকে মাত্র চার কিলোমিটার বাইরে। যদিও সুন্দরবন থেকে এই প্রকল্প এলাকার দূরত্ব আসলেই ১৪ কিলোমিটার কি না, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। অনেকেই বলছেন সুন্দরবন থেকে এর দূরত্ব আসলে মাত্র ৯ কিলোমিটার। যা আরও ভয়াবহ ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *