International_Crimesনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের খসড়া দেয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী কর্মচারী নয়ন আলীকে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম নিজ হাতে সিমফোনি এক্সপোরার মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন।বৃহস্পতিবার রিমান্ড শেষে আদালতে নয়ন স্বীকারোক্তিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে। আট দিন রিমান্ডের পাঁচ দিন শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভূইয়ার কাছে তিনি ওই জবানবন্দি দেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইন্সপেক্টর মোহাম্মাদ শাহজাহান স্বীকারোক্তি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন। গত ৫ অক্টোবর এ আসামিসহ ট্রাইব্যুনালের আরেক কমচার্রী ফারুক আহমেদের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে নয়ন জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগদান করেন। তার কাজ ছিল আলমারি থেকে মামলার নথিপত্র এজলাসে নিয়ে যাওয়া এবং এনে রাখা। বেঞ্চ অফিসার গৌরিচন্দ্রের নির্দেশে তিনি ওই কাজগুলো করতেন। একই ধরনের কাজ রাসেল ও রশিদ নামে আরো দুই জন করতেন। কিন্তু তিনি তাদের মধ্যে কম্পিউটার চলাতে পারতেন। যা বেঞ্চ অফিসার গৌরিচন্দ্রসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সকলেই জানতেন। কম্পিউটার জানার সুবাদে ট্রাইব্যুনালে ছোটখাটো লেখালেখির কাজ বেঞ্চ অফিসার এবং পিও-এর কম্পিটারে বসে তিনি টাইপ করতেন।
জবানবন্দিতে নয়ন আরো জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি দেশের বাড়িতে যান। বাড়িতে যাওয়ার তিন/চার দিন আগে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী ফারুক আহমেদ তাকে ডেকে বলেন যে, সাকা চৌধুরীর মামলার আদেশের তারিখগুলো তাকে এনে দিতে হবে। নয়ন বলেন, কিভাবে দেবো, মূল ফাইল স্যারের (বিচারপতি) বাসায়। ফারুক বলেন, দুইটি কম্পিউটার থেকে এনে দিবি। নয়ন ওইদিন কম্পিউটার থেকে ১০০টা আদেশ ও সাকা চৌধুরী নামের ফোল্ডর বাছাই করে রাখে। তার দুই দিন পর ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র মেহেদী হাসান এবং ফারুক তাকে খাবার রুমে ডেকে নিয়ে একটি পেনড্রাইভ  দিলে তিনি আদেশগুলো ও সাকা চৌধুরী নামের ফোল্ডার পেনড্রাইভে করে এনে দেন। ওইদিন রবিবার ছিল। ফারুক তখন মেহেদীকে বলেন, টাকা কই? মেহেদী বলেন, টাকা আনি নাই। তখন ফারুক নিজ পকেট থেকে নয়নকে ৫০০ টাকা দেয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নয়ন চা খেতে আসলে মেহেদীর সঙ্গে দেখা হয়। কাজ না থাকলে মেহেদী তাকে চেম্বারে যেতে বললে ব্যারিস্টার ফখরুলের কাকরাইলের চেম্বারে যায়। চেম্বারে যাওয়ার পর মেহেদী ব্যারিস্টার ফখরুলের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। ব্যারিস্টার ফখরুল ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে তাকে ৫০০ টাকা দেন। এরপর মেহেদী বাইরে এসে ওইদিন তাকে আরেকটি পেনড্রাইভ দেয়। বলে আরেকদিন বাকি আদেশগুলো নিয়ে আসবেন। এর দুই দিন বেঞ্চ অফিসার গৌরিচন্দ্র তার বেতনের স্টেটমেন্ট টাইপ করতে বলে। ট্রাইপ করার সময় দেখতে পান, সাকা চৌধুরী নামে যে ফোলডারটি তিনি দিয়েছিলেন তাতে রায়ের কপি রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মেহেদীকে ফোন করে রায় ডিলিট করতে বলে। এরপর আবার (ব্যারিস্টার ফখরুলের) চেম্বারে গিয়ে ডিলিট করেছেন কি না জানতে চান। মেহেদী জানান, ডিলিট করা যাবে না, ফখরুল সাহেব ডিলিট করতে নিষেধ করেছেন। এরপর ব্যারিস্টার ফখরুলের কাছে গেলে সেখানে থাকা সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার হুমকি দিয়ে বলেন, রায়ের বাকি অংশ এনে দিবি। না দিলে জানে মেরে ফেলব। সঙ্গে ব্যারিস্টার ফখরুলও ম্যানেজারের সাথে একমত পোষণ করে। পরে ভয়ে চলে আসেন নয়ন।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর আবার ব্যারিস্টার ফখরুলের চেম্বারে গেলে মেহেদী তাকে ব্যারিস্টার ফখরুলের কাছে নিয়ে যান। ব্যারিস্টার ফখরুল তাকে বলে যে, নয়ন তুমি তো আমাদের অনেক উপকার করেছ। তোমার কি আন-রেজিস্ট্রার্ড সিম আছে?
নয়ন জানায়, আছে। তখন ব্যারিস্টার ফখরুল তাকে একটা সিমফোনি এক্সপোরার মোবাইল ফোন দিয়ে বলেন, ওই সিম এই মোবাইলে শুধু মেহেদীর সঙ্গে কথা বলবা। যার নম্বর ছিল ০১৭৮৬৯৮৯০৯৮। আর মেহেদীর নম্বর ০১৭৩২১০৭৮০১। এরপর চার/পাঁচ দিন যাবৎ যা টাইপ হতো তা তিনি পেনড্রাইভে করে মেহেদীকে সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  দিয়েছেন। এরপর ১ অক্টোবর রায়ের দিন বেঞ্চ অফিসারের মুখে শুনতে পান, রায় হওয়ার আগেই রায় অনলাইনে প্রকাশ হয়ে গেছে। মেহেদীকে ফোন করে জানালে চেম্বারে যেতে বলেন। চেম্বারে গেলে মেহেদী জানান, সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার ও তার পরিবারের লোকজন ওই কপি নিয়ে গেছে। ওরাই হয়তো এটা অনলাইনে দিয়েছে। চিন্তা করতে নিষেধ করে বলে যে, ওরা দিয়ে থাকলে ওদের কাছ থেকে তোমাকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেবো।
চলে আসার পর বিকেলে মেহেদী ফোন করে আর যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। আর মেরে ফেললেও তাদের নাম বলতে নিষেধ করে। এরপর বেঞ্চ অফিসার অফিসে ডাকলে সে ঘটনা বলে দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে নয়ন আলী ও ফারুক আহমেদকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। নয়ন আলী ওই ট্রাইব্যুনালের মাস্টাররোলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ফারুক দুই নং ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *