durga.previewনিউজবাংলা২৪ডটনেট:: সামনে আর কোনো বাধা দেখছেন না যৌনকর্মীরা। অবশেষে তাদের দুর্গাপুজার ইচ্ছাপুরণ হতে চলেছে। কারণ, সোনাগাছি এলাকায় যৌনকর্মীদের দুর্গাপুজা সংক্রান্ত মামলায় বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ব্যতিক্রম হিসেবে এই পুজা করতে দেয়া উচিত। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধায় এদিন জানান, কলকাতায় নতুন কোনও পুজা করা যাবে না বলে পুলিশি নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও তিনি মনে করেন, যৌনকর্মীদের দুর্গাপুজার জন্য একটা ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না তা দেখা উচিত। গিরিশ পার্ক থানার তদন্তকারী অফিসারকে ওই এলাকা ঘুরে দেখে আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করতে বলেছেন বিচারপতি।

আবেদনকারীদের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এদিন বলেন, “যাদের বাড়ির দরজার মাটি ছাড়া দুর্গাপুজা হয় না সেই যৌনকর্মীদের পুজার পথ আটাকানোর কথা উঠছে। দিন বদলালেও এই মানুষগুলিকে আমরা মানুষ হিসেবে মূল্য দিতে রাজি নই।” জবাবে রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তার বাড়িতে ৪০ বছর দুর্গাপুজা হয়। তিনি কখনও বেশ্যাদ্বার-মৃত্তিকার কথা শোনেননি। উত্তরে অরুণাভবাবু বলেন, “একটু শরৎচন্দ্র পড়ুন।

বাদানুবাদ শোনার পর বিচারপতি এদিন জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে বাগবাজার অঞ্চলে বড় হয়েছেন। ওই এলাকার মানচিত্র তাঁর জানা। তিনি চান, একটা পথ খুঁজে বার করতে যাতে এই মানুষেরা পুজা করার সুযোগ পান, তার পর আজ, বৃহস্পতিবার আবার শুনানি হবে।

বিচারপতির এই বক্তব্যের পরেই সোনাগাছিতে পুরোদস্তুর পুজার হাওয়া। কুমোরটুলির শিল্পী অমর পালের কাছে দুর্গাপ্রতিমার বায়না দিয়ে ফেলেছেন যৌনকর্মীরা। চাঁদার ব্যাপারও ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাদের সংগঠন দুর্বারের সদস্যসংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। ঠিক হয়েছে, সবাই ২০ টাকা করে চাঁদা দেবেন। তাতেই উঠে যাবে পুজার খরচ। নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির অফিসের এক তলার দালানে জোরকদমে চলছে পুজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। হইহই করে নাচ হচ্ছে“নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল…।

এতদিন যৌনকর্মীদের দাবির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘শ্রমিকের অধিকার আদায়।’ এই মুহূর্তে তা বদলে ‘দুর্গাপুজার অধিকার আদায়’-এর কথা যৌনপল্লির বাতাসে। কী এমন হলো যাতে দুর্গাপুজার আয়োজন করতে চেয়ে একজোট হয়ে আওয়াজ তুললেন সোনাগাছির প্রান্তিক মহিলারা?

উত্তর এল “এটা আমাদের সামাজিক অস্তিত্বের লড়াই।” নিজেদের মতো করে তারা জানালেন, এটা আসলে মানুষ হিসেবে সম্মানিত হতে চাওয়ার আর্জি।

দুর্বারের প্রধান স্মরজিৎ জানা বলেছেন, “যৌনকর্মীরা স্কুলে শিশুদের ভর্তি করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন। তাদের সন্তানদের জন্য হোস্টেল খুলতে দিয়েও লড়াই করতে হয়েছে। প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল ‘উষা কোঅপারেটিভ’ শুরুর সময়। দুর্গাপুজা করতে চাওয়াটাও যৌনকর্মী মহিলাদের সমাজের মূলস্রোতে থাকতে চাওয়ার একটা চেষ্টা।

এলাকার বাসিন্দা যৌনকর্মীর সন্তান বছর পনেরোর লোকনাথ বলেন,“আমাদের পাড়ার পিছন দিকে একটাই দুর্গাপুজা হয়। ছেলেমেয়েরা হয়তো প্যান্ডেলে বসে গল্প করছে, আমরা সেখানে গেলেই ওদের মা-বাবারা ইশারায় ওদের উঠে পড়তে বলেন। কতবার অপমানে বাড়ি চলে এসেছি।”

পুজা-সঙ্গীতা-ত্রিধার মতো যৌনকর্মীর সন্তানেরা জানান, তারা সেজেগুজে মণ্ডপে গেলে অনেকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। টিটিকিরি দেয়। এই অপমানের কথা বলেছেন শেফালি রায়, কল্পনা দাস, চম্পা সর্দার, পূর্ণিমা চট্টোপাধ্যায়, সীমা ঘোষেরাও।

পূর্ণিমা বলেন, “আমরা চাই, এমন একটা পুজা যেখানে আমাদের দেখে কেউ প্রসাদের থালাটা আলাদা করে রাখবে না, অঞ্জলির সময় আলাদা লাইনে দাঁড় করাবে না। আমাদের বাচ্চাদেরও কেউ বলবে না– তোরা কেন এই প্যান্ডেলে এসেছিস?” কল্পনা বলেন, “সিঁদুর খেলতে গেলে আমাদের দেখে বাড়ির মেয়ে-বৌ-রা সরে যান। আমাদেরও পুজার ফল কাটতে, সন্ধিপুজার প্রদীপ জ্বালাতে, রাতভর মণ্ডপে বসে আড্ডা দিতে ইচ্ছা করে। তাই আদালতের কাছে আমরা আমাদের একটা দুর্গাপুজা চেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *