নিউজবাংলা২৪ডটনেট:: নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। জোটের প্রধান শরিক বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে ২৪ অক্টোবরের পর থেকে এ আন্দোলনের সূচনা করবে। এই সময়ের মধ্যে সরকার বাধ্য না করলে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেবে না-এমনটিই জানা গেছে দলীয় সূত্রে। ঈদ ও পূজার সময়ে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন ও রায় কার্যকরের বিষয়ে সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে কঠিন কর্মসূচি। জানা গেছে, শীর্ষ নেতাদের বেলায় ছাড় দিতে নারাজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, অক্টোবরের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাংগঠনিক কমিটির বাইরে আন্দোলন পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। সারাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে দশজন শিবির ও দশজন জামায়াত কর্মীর মোট ২০ জনের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। যারা সরকারবিরোধীসহ সব ধরনের আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে আন্দোলন বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘনঘন বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মাঠে সরব রাখবে। ইতিমধ্যে হরতালসহ দুই দফা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াত ইসলামী।
এছাড়াও বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চলমান সফরগুলোর কারণেই অনেকটা প্রসাশনের হয়রানি ছাড়াই সফর করতে পারছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওইসব এলাকার সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা বাড়াতে চাচ্ছে দলটি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও শীর্ষ নেতাদের মুক্তি, তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাত বিভাগে সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাও কঠিনভাবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিবিরের এক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, “সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে জামায়াত-শিবির নাশকতার পরিকল্পনা করছে। একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট, তবে জামায়াত-শিবির নাশকতা নয়, সরকার পতনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।” কার্যত দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে রক্ষার জন্য রিভিউ আবেদন ছাড়া সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ। আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, তিনি রিভিউ আবেদন করতে পারবেন না। এ অবস্থায় রিভিউ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে জামায়াত-শিবির এ বিচারকে প্রহসন বলে বারবার দাবি করে আসছে। তারা বলেন, সরকার যদি শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অন্যায়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “ঈদের আগে বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে চাচ্ছি না। তবে সরকার যদি বাধ্য করে তাহলে তো যেতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম থেকে শিবিরের অনেক নেতাকর্মীদের সরকার অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি খারাপ করে তুলছে। এগুলো বন্ধ না হলে মাঠে নামতে বাধ্য হবো।”
কাদের মোল্লার বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ বিচার করছে। এটা প্রহসনের বিচার। এই বিচারের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেবে তখন আমরা বসে থাকবো না।” জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের কথা চিন্তা করেই আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিক করি। জনগণের কথা চিন্তা করেই কর্মসূচি শিথিল করি। কিন্তু সরকার যদি কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
তিনি বলেন, “আবদুল কাদের মোল্লার আইনি প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। বিচারিক আদালতের সাজা বাড়ানো পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দৃষ্টান্ত নেই। রায়ের পরে আইন সংশোধন করার অর্থই হচ্ছে বিচার উদ্দেশ্য নয়, আব্দুল কাদের মোল্লাকে জুডিশিয়াল কিলিং করাই সরকারের উদ্দেশ্য।” আযাদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সরকার যদি একগুয়েমি, দাম্ভিকতার পরিচয় দিয়ে হটকারী পন্থা অবলম্বন করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। এতে সরকারের অস্তিত্বও হুমকির মধ্যে পড়বে।”