20120212-muhith-460‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের (এফআরএ) বিষয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টরা বিরোধীতা করে আসছেন। তাঁদের বিষয়ে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো বলে, তাদের ধ্বংস করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টরা। তাঁদের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক থাকে না।’’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আর্থিক প্রতিবেদন আইন (এফআরএ) ২০১৩ আইনটি মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে। এটি পাস করা জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।’’
এদিকে, চলতি অধিবেশনে এফআরএ পাস হতে যাচ্ছে জেনে বিনিয়োগকারীরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলেই যাতে আইনটি কার্যকর হয় সে দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, গত ১৯ আগষ্ট মন্ত্রীসভায় এফআরএ আইনটি অনুমোদন করার পর অজানা কারণে এর বিরোধীতা করছে অডিটরসদের সংগঠন দ্য ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। গত ১ সেপ্টেম্বর আইসিএবি নেতৃবৃন্দ এক গোলটেবিল বৈঠকে সাংবাদিকদের এই আইনের বিরোধীতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এছাড়া আইসিএবি নেতৃবৃন্দ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করে এ আইনের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কথাও জানায়।
আইসএবি নেতৃবৃন্দের মতে, প্রস্তাবিত আইনটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হিসাব ও নিরীক্ষা পেশার স্বাধীনতা শুধু ক্ষুন্ন হবে না, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশা নিয়ন্ত্রণে দ্বৈততার কারণে সাংঘর্ষিক ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে, যা আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত ও নিরীক্ষার কাজ বাধাগ্রস্ত করবে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানার আর্থিক হিসাব প্রস্তুত ও নিরীক্ষা কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়বে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা আইসিএবি’র এ বিরোধীতা মানতে নারাজ। তাদের মতে, অডিটরসরা আইনের বাইরে থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারী এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অডিটরসদের অনিয়ম রোধের লক্ষ্যে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
তাদের মতে, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট কার্যকর হলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের অনৈতিকতা কমে আসবে। এর ফলে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রতিফলিত হবে। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে। তাই এক্ষেত্রে অডিটরসদের বিরোধীতা অযৌক্তিক।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ পাঁচ যুগেও দেশের পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ না হওয়ার পেছনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অনেকাংশে দায়ী। অধিকাংশ কোম্পানিই বছর শেষে মনগড়া আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারী তথা সার্বিক অর্থনীতি। অধিকাংশ কোম্পানি ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে থাকে। যার ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এতে করে ব্যাহত হয় দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড। আর কোম্পানিগুলো অনিয়ম করে থাকে অডিটরসদের সহায়তায়। অনেক সময় কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ করে দেয় অডিটরসরাই। এর বিনিময়ে অনেক অখ্যাত অডিটরস প্রতিষ্ঠান কোম্পানিগুলো থেকে বিশেষ আর্থিক সুবিধাও নিয়ে থাকে। তাই অডিটরদের যুযোপযোগী আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আর এজন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, যেসব অডিটরস অনৈতিক কাজ করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নে অডিটরসদের বিপক্ষে অবস্থান এটা প্রমান করে যে তারা অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাবেন। না হলে এর বিরোধীতা করার কোনো কারণ নেই।
এদিকে, বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাছে অডিটরসদের কার্যকলাপ নিয়ে অভিযোগ আছে। আর এই অডিটরসরাই হচ্ছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম যাদের দ্বারা একটি কোম্পানি সর্ম্পকে বিনিয়োগকারীরা সঠিক ধারণা পান। কিন্তু তাদেরকে কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না। আর এই সুযোগে বিভিন্ন অডিট প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থেকে স্বার্থ উদ্ধার করে ভুল তথ্য সরবরাহ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনৈতিকতার কারণে বিনিয়োগকারী তথা সার্বিক পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
উল্লেখ্য, এরমধ্যে কোনো রকম কারসাজি বা তথ্য গোপন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তির বিধান রেখে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের (এফআরএ) খসড়া গত ১৯ আগষ্ট মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। খসড়াটি আইনে পরিনত হলে সব নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিএসইসি থেকে নিবন্ধন সনদ নিতে হবে। এর পর কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর আইসিএবি নেতৃবৃন্দ এক গোলটেবিল বৈঠকে এ আইনের বিরোধীতার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *